🕌 লাহোর প্রস্তাব: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক ঘোষণা
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ, লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে উত্থাপন করা হয় এক ঐতিহাসিক প্রস্তাব — যা পরে পরিচিত হয় লাহোর প্রস্তাব বা পাকিস্তান প্রস্তাব নামে। এই প্রস্তাবে উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছিল।
তবে, বাস্তবে একটি মাত্র রাষ্ট্র — পাকিস্তান —- কেন গঠিত হলো? চলুন বুঝে নিই সেই প্রেক্ষাপট।
🔍 কী ছিল লাহোর প্রস্তাবে?
লাহোর প্রস্তাবে বলা হয়:
“…the areas in which the Muslims are numerically in a majority… should be grouped to constitute independent states…”
এখানে “states” শব্দটি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয় অস্পষ্টতা বজায় রেখে, যেন রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া যায়।
🧭 কেন শেষ পর্যন্ত একক পাকিস্তান গঠিত হলো?
✅ ১. কৌশলগত অস্পষ্টতা:
“States” শব্দটি দিয়ে প্রথমে পূর্ব ও পশ্চিম অংশে আলাদা রাষ্ট্রের আভাস দেওয়া হলেও, পরবর্তীতে একক রাষ্ট্র গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়।
✅ ২. জিন্নাহর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় একত্রীকরণ:
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ একটি শক্তিশালী, একক রাষ্ট্র চেয়েছিল — যার নেতৃত্ব থাকবে পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে।
✅ ৩. পূর্ব বাংলার গুরুত্ব হ্রাস:
পূর্ব বাংলা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যা নিয়েও রাজনৈতিকভাবে উপেক্ষিত ছিল, ফলে আলাদা রাষ্ট্রের ভাবনা বাস্তবে রূপ নেয়নি।
✅ ৪. রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রশাসনিক সুবিধা:
একক রাষ্ট্র গঠন অনেক বেশি বাস্তবসম্মত মনে হয়েছিল তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতৃত্বের কাছে।
📌 ফলাফল ও পরিণতি
যদিও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে একটি একক রাষ্ট্র গঠিত হয়, কিন্তু এই দুই অংশের সংস্কৃতি, ভাষা, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে ছিল প্রবল বৈষম্য। এরই ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
লাহোর প্রস্তাব ছিল একটি ঐতিহাসিক দলিল — যা মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখায়। যদিও প্রস্তাবে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল, বাস্তবে একটি পাকিস্তান রাষ্ট্রই গঠিত হয়, রাজনৈতিক কৌশল, নেতৃত্বের ইচ্ছা ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে।