ভারত পাকিস্তানের শত্রুতার উৎস কি? দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না করে কেন এই শত্রুতা জিইয়ে রাখা হয়েছে?

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শত্রুতা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির একটি কেন্দ্রীয় সমস্যা। এই শত্রুতা ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু হয়ে কাশ্মীর বিরোধ, সন্ত্রাসবাদ এবং রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে টিকে আছে।

ভারত-পাকিস্তান শত্রুতার উৎস

ভারত-পাকিস্তান শত্রুতার শিকড় ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ ভারতের দেশভাগে। ব্রিটিশ শাসনের সমাপ্তির পর, ভারত ধর্মের ভিত্তিতে দুটি দেশে বিভক্ত হয়: হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান। এই বিভাজনের সময়, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর একটি অংশ পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলেও, রাজ্যের হিন্দু শাসক মহারাজা হরি সিংহ প্রথমে স্বাধীন থাকতে চান। তবে, পাকিস্তানি উপজাতিদের আক্রমণের পর তিনি ভারতের সঙ্গে যোগ দেন, যা ১৯৪৭-৪৮ সালে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সূচনা করে (India-Pakistan Partition | Origins).

দেশভাগের সময় ১-২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় এবং ২ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এই সহিংসতা দুই দেশের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস তৈরি করে। কাশ্মীর বিরোধ এই শত্রুতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে, যা ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের মতো সংঘাতের কারণ হয় (Indo-Pakistani wars and conflicts – Wikipedia). এছাড়াও, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীন হওয়ার সময় ভারতের ভূমিকা পাকিস্তানের কাছে আরও ক্ষোভের কারণ হয়।

কেন এই শত্রুতা টিকে আছে?

ভারত-পাকিস্তান শত্রুতা টিকে থাকার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:

কাশ্মীর বিরোধ

কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ এই শত্রুতার প্রধান কারণ। ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরের ওপর দাবি করে, এবং এই অঞ্চলে সীমান্ত সংঘর্ষ এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ২০১৯ সালে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে (Kashmir: Why India and Pakistan fight over it – BBC News).

রাজনৈতিক স্বার্থ

দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব শত্রুতাকে ভোটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলো পাকিস্তানবিরোধী অবস্থানকে জনপ্রিয়তার জন্য ব্যবহার করে, অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং রাজনীতিবিদরা কাশ্মীর ইস্যুকে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে।

সন্ত্রাসবাদ এবং অবিশ্বাস

পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী, যেমন লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদ, ভারতে হামলা চালিয়েছে, যেমন ২০০১ সালের ভারতীয় সংসদ হামলা এবং ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা। ভারতের দাবি, পাকিস্তান এই গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করে, যা পাকিস্তান অস্বীকার করে। এই অভিযোগ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথে বড় বাধা (History of Conflict in India and Pakistan – Center for Arms Control and Non-Proliferation).

আন্তর্জাতিক শক্তির ভূমিকা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার মতো পরাশক্তি এই শত্রুতাকে নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, চীন পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে বিনিয়োগ করে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। অন্যদিকে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে (India–Pakistan relations – Wikipedia).

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ব্যর্থতা

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শান্তির জন্য বহু দ্বিপাক্ষিক আলোচনার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রচেষ্টা হলো:

  • সিমলা চুক্তি (১৯৭২): ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই চুক্তি দ্বিপাক্ষিকভাবে সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
  • লাহোর ঘোষণা (১৯৯৯): ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর পাকিস্তান সফরের পর এই ঘোষণা শান্তির আশা জাগায়, কিন্তু কার্গিল যুদ্ধ এটিকে ভেস্তে দেয়।
  • আগ্রা শীর্ষ সম্মেলন (২০০১): এই সম্মেলন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে ব্যর্থ হয়।

এই ব্যর্থতার প্রধান কারণ হলো অবিশ্বাস। ভারতের দাবি, পাকিস্তানকে প্রথমে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করতে হবে, যা পাকিস্তান মানতে নারাজ। পাকিস্তান আবার কাশ্মীরে ভারতের সামরিক উপস্থিতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। এই পারস্পরিক অভিযোগ আলোচনাকে অচল করে রেখেছে (A History of the Conflict between India and Pakistan with Intervention from the United Nations).

বর্তমান প্রেক্ষাপট

২০২৫ সালেও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা এবং সীমান্ত উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় পর্যটক ছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং দুই পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে, যা পাকিস্তান অস্বীকার করেছে। এই ঘটনার পর ভারত ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করেছে এবং সীমান্তে সামরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে (What to Know About India and Pakistan’s Escalating Tensions in Kashmir | TIME).

তথ্যসূত্র এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ

নিচের তালিকায় ভারত-পাকিস্তান শত্রুতার কিছু মূল ঘটনা এবং তাদের প্রভাব দেখানো হলো:

ঘটনা

বছর

বিবরণ

প্রভাব

দেশভাগ ১৯৪৭ ব্রিটিশ ভারত ভারত এবং পাকিস্তানে বিভক্ত হয়। ১-২ কোটি বাস্তুচ্যুত, ২ লাখ-২০ লাখ মৃত্যু, কাশ্মীর বিরোধের সূচনা।
প্রথম যুদ্ধ ১৯৪৭-৪৮ কাশ্মীরে পাকিস্তানি উপজাতিদের আক্রমণ, ভারতের হস্তক্ষেপ। কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত, নিয়ন্ত্রণ রেখা প্রতিষ্ঠিত।
দ্বিতীয় যুদ্ধ ১৯৬৫ কাশ্মীর নিয়ে সীমান্ত সংঘর্ষ থেকে পূর্ণ যুদ্ধ। কোনো পক্ষের সুস্পষ্ট জয় না হওয়া, তাশখন্দ চুক্তি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১ ভারতের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীন হয়। পাকিস্তানের পরাজয়, অবিশ্বাস বৃদ্ধি।
কার্গিল যুদ্ধ ১৯৯৯ পাকিস্তানি সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে। ভারতের বিজয়, আলোচনার পথে বাধা।
মවිশেষ হামলা ২০০১, ২০০৮ ভারতীয় সংসদ এবং মুম্বাই হামলা। আলোচনা ভেস্তে যায়, অবিশ্বাস বৃদ্ধি।
আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল ২০১৯ জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল। পাকিস্তানের তীব্র প্রতিক্রিয়া, উত্তেজনা বৃদ্ধি।
পাহালগাম হামলা ২০২৫ ২৬ জন নিহত, ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। সীমান্তে সংঘর্ষ বৃদ্ধি, ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত।

উপসংহার

ভারত-পাকিস্তান শত্রুতা একটি জটিল সমস্যা, যার শিকড় ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক। কাশ্মীর বিরোধ, সন্ত্রাসবাদ এবং রাজনৈতিক স্বার্থ এই শত্রুতাকে টিকিয়ে রেখেছে। দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস এবং পারস্পরিক অভিযোগের কারণে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। শান্তির জন্য সন্ত্রাসবাদ বন্ধ, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা প্রয়োজন। তবে, উভয় দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই শত্রুতার সমাধান কঠিন।

সিন্ধু পানি চুক্তি কি? ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হঠাৎ পানি সংকট কিভাবে তৈরি হলো?

সিন্ধু পানি চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পানি বণ্টনের একটি ঐতিহাসিক চুক্তি, যা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সহযোগিতার প্রতীক। তবে, ২০২৫ সালের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের এই চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে নতুন সংকট তৈরি করেছে। এই ব্লগে আমরা সিন্ধু পানি চুক্তি, পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর পানি বণ্টন নিয়ে উত্তেজনা এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সিন্ধু পানি চুক্তিঃ ভারত পাকিস্তান

সিন্ধু পানি চুক্তি কী?

সিন্ধু পানি চুক্তি ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়, বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় (Indus Waters Treaty)। এটি সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ছয়টি নদী—সিন্ধু, ঝিলাম, চেনাব, রাভি, বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সুতলেজ)—এর পানি ভাগ করে। চুক্তির মূল বিষয়:

  • পূর্বাঞ্চলের নদী (রাভি, বিপাশা, শতদ্রু): ভারতের নিয়ন্ত্রণে, বার্ষিক প্রবাহ প্রায় ৪১ বিলিয়ন ঘনমিটার।
  • পশ্চিমাঞ্চলের নদী (সিন্ধু, ঝিলাম, চেনাব): পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে, বার্ষিক প্রবাহ প্রায় ৯৯ বিলিয়ন ঘনমিটার। পাকিস্তান এই নদীগুলোর ৮০% পানি পায়।
  • ভারত পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোতে সীমিত জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচের জন্য পানি ব্যবহার করতে পারে, তবে প্রবাহে বাধা না দেওয়ার শর্তে।

চুক্তিতে একটি স্থায়ী কমিশন রয়েছে বিবাদ সমাধানের জন্য, এবং গুরুতর বিবাদে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ বা মধ্যস্থতা আদালতের ব্যবস্থা আছে। এই চুক্তি ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং কার্গিল যুদ্ধ সত্ত্বেও টিকে ছিল, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল পানি চুক্তিগুলোর একটি করে (Britannica)।

সিন্ধু পানি চুক্তি

পেহেলগাম হত্যাকাণ্ড ও চুক্তি স্থগিত

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের বৈসারান উপত্যকায় একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন, প্রধানত পর্যটক, নিহত এবং ১৭ জন আহত হন (Al Jazeera)। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ), লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা, দায়ী। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি (CCS) পাঁচটি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা (The Hindu)। অন্যান্য পদক্ষেপগুলো হলো:

  • ওয়াঘা-আট্টারি সীমান্ত বন্ধ।
  • পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার।
  • পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার।
  • পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়তে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা।
  • সার্ক ভিসা ছাড় প্রকল্প বাতিল।

পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তকে “যুদ্ধের কাজ” হিসেবে আখ্যায়িত করে শিমলা চুক্তি সহ অন্যান্য দ্বਸিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তকে “যুদ্ধের কাজ” হিসেবে আখ্যায়িত করে শিমলা চুক্তি সহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করেছে এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ।

পেহেলগাম এ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ড সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

পানি বণ্টন নিয়ে উত্তেজনা

পানি বণ্টন নিয়ে উত্তেজনা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন নয়। ২০২৩ সালে ভারত চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব দেয়, যা পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করে। ২০২৪ সালে ভারত স্থায়ী কমিশনের সভা বাতিল করে। ২০২৫ সালের মার্চে ভারত রাভি নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে, যা পাকিস্তানের কৃষি অঞ্চলে প্রভাব ফেলে (Reuters)।

পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর চুক্তি স্থগিত করা এই উত্তেজনাকে চরমে নিয়ে গেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। ভারতের জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবাশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের কাছে চুক্তি সংশোধনের দীর্ঘদিনের দাবি উত্থাপন করেছেন, যা পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করেছে (India Today)।

পাকিস্তানের উপর প্রভাব

পাকিস্তানের কৃষি অর্থনীতি সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব নদীর উপর নির্ভরশীল, যা দেশটির ৮০% কৃষি এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে। চুক্তি স্থগিত হলে ফসল উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (India Today)। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২৫ সালে কম বৃষ্টি এবং তুষার গলনের ফলে পানির স্তর ইতিমধ্যেই ২০-২৫% কমে গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের বর্তমান অবকাঠামো পানির প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব নদীগুলো প্রচুর পানি বহন করে, বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বরফ গলার সময়। বাঁধ নির্মাণ করলে ভারতের উজানের অঞ্চলে, যেমন জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশে, বন্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে (The New York Times)। ভারতের জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাটিল ঘোষণা করেছেন যে সিন্ধু অববাহিকায় বাঁধের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।

সম্ভাব্য পানি যুদ্ধের ঝুঁকি

পানি দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল একটি প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক এবং কৌশলগত অস্ত্র। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, এবং পানি নিয়ে সংঘাত তাদের মধ্যে একটি বৃহৎ সামরিক সংঘর্ষের কারণ হতে পারে। পাকিস্তানের পানির উপর নির্ভরশীলতা এবং ভারতের উজানের ভৌগোলিক সুবিধা এই সংঘাতকে জটিল করে। তবে, স্যাটেলাইট প্রযুক্তির যুগে পানি সংরক্ষণের যেকোনো পদক্ষেপ গোপন রাখা সম্ভব নয়, এবং এটি রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে (BBC News)।

পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কৌশলগত বিশেষজ্ঞ ব্রহ্ম চেলানি মনে করেন, ভারত ভিয়েনা কনভেনশন অন দ্য ল অফ ট্রিটিজ (১৯৬৯) এর ৬০ নম্বর ধারার অধীনে চুক্তি থেকে আইনি প্রত্যাহার করতে পারে, যদি পাকিস্তান চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে (India Today)।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ইসরায়েল পেহেলগাম হামলার নিন্দা করেছে, তবে চুক্তি স্থগিত নিয়ে স্পষ্ট সমর্থন দেয়নি। কিছু মুসলিম দেশ, যেমন মালদ্বীপ, মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক, যিনি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী, এখনও কোনো মন্তব্য করেনি (Times of India)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

উপসংহার

সিন্ধু পানি চুক্তি ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতার একটি বিরল উদাহরণ। পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের কৃষি, অর্থনীতি এবং কাশ্মীরের শান্তির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও ভারতের অবকাঠামো সীমাবদ্ধতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পানির প্রবাহ বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি সম্ভাব্য “পানি যুদ্ধ” এর ঝুঁকি তৈরি করেছে। কূটনৈতিক আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এই সংকট নিরসনে অপরিহার্য।

পহেলগাম হত্যাকাণ্ড: কী ঘটেছিল?

পহেলগাম, কাশ্মীরের একটি নয়নাভিরাম উপত্যকা, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কিন্তু ২০২৫ সালের এপ্রিলে এই শান্তির স্বর্গে ঘটে যাওয়া একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলা গোটা বিশ্বকে শিহরিত করেছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানবো পহেলগাম কোথায়, এটি কেন বিখ্যাত, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পহেলগাম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত, এবং এর সম্ভাব্য কারণ ও ফলাফল। এই ঘটনা কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, তাও আলোচনা করব।

পহেলগাম কোথায়?

পহেলগাম ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় অবস্থিত একটি ছোট শহর এবং পর্যটন কেন্দ্র। এটি শ্রীনগর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে, লিডার নদীর তীরে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,২০০ মিটার (৭,২০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। কাশ্মীরি ভাষায় “পহেলগাম” মানে “মেষপালকদের গ্রাম” (পুহেল = মেষপালক, গোম = গ্রাম), যা এর ঐতিহ্যবাহী পশুপালনের ইতিহাসকে নির্দেশ করে। এটি অনন্তনাগ জেলার পহেলগাম তহসিলের প্রধান কার্যালয় এবং কাশ্মীর উপত্যকার একটি প্রধান হিল স্টেশন।

পেহেলগাম

পেহেলগাম

পহেলগামের চারপাশে রয়েছে পাইনের জঙ্গল, তুষারাবৃত পর্বত, এবং সবুজ মাঠ, যা এটিকে “মিনি সুইজারল্যান্ড” নামে অভিহিত করেছে। এটি বৈসারান উপত্যকা, বেতাব ভ্যালি, আরু ভ্যালি, এবং চন্দনবাড়ির মতো প্রাকৃতিক স্থানের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।

পহেলগাম কেন বিখ্যাত?

পহেলগাম তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে এর কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

  1. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: বৈসারান উপত্যকা, যাকে “মিনি সুইজারল্যান্ড” বলা হয়, এবং লিডার নদীর শান্ত প্রবাহ পহেলগামকে পর্যটকদের জন্য স্বর্গ করে তোলে। বেতাব ভ্যালি, যেখানে বলিউডের বিখ্যাত ছবি “বেতাব” শুটিং হয়েছিল, এটির আরেকটি আকর্ষণ।
  2. অমরনাথ যাত্রা: পহেলগাম বার্ষিক অমরনাথ তীর্থযাত্রার প্রধান সূচনাস্থল। প্রতি বছর জুলাই-আগস্টে হাজার হাজার হিন্দু তীর্থযাত্রী এখান থেকে অমরনাথ গুহায় যাত্রা করেন, যা হিন্দু দেবতা শিবের সাথে সম্পর্কিত।
  3. পর্যটন ও অ্যাডভেঞ্চার: পহেলগামে ঘোড়ায় চড়ে ভ্রমণ, ট্রেকিং, এবং ক্যাম্পিং খুব জনপ্রিয়। পর্যটকরা এখানে আরু ভ্যালি বা তুলিয়ান লেকের মতো স্থানে ট্রেকিং করতে আসেন।
  4. চলচ্চিত্র শুটিং: পহেলগামের মনোরম দৃশ্য এটিকে বলিউড ও আঞ্চলিক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় শুটিং স্পট করেছে। “বাজরঙ্গী ভাইজান” এবং “হাইওয়ে” এর মতো ছবি এখানে শুট হয়েছে।

পহেলগাম এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য আদর্শ, যখন আবহাওয়া মনোরম এবং প্রকৃতি তার পূর্ণ রূপে ফুটে ওঠে।

২০২৫ পহেলগাম হত্যাকাণ্ড: কী ঘটেছিল?

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, পহেলগামের বৈসারান উপত্যকায় একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলা সংঘটিত হয়, যা ভারতের ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পর সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচিত। এই হামলায় ২৬ থেকে ২৮ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন ভারতীয় পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা, এবং নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুজন বিদেশি। আরও ২০ জনের বেশি আহত হন।

হামলার বিবরণ

  • সময় ও স্থান: হামলাটি বিকেল ২:৫০ নাগাদ বৈসারান উপত্যকায় ঘটে, যেখানে পর্যটকরা ঘোড়ায় চড়ে বা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করছিলেন।
  • হামলাকারী: ৫-৭ জন জঙ্গি, সামরিক পোশাক পরে, M4 কার্বাইন এবং AK-47 রাইফেল ব্যবহার করে। তারা বডি ক্যামেরা ব্যবহার করেছিল, যা হামলার দৃশ্য রেকর্ড করেছে।
  • লক্ষ্য: হামলাকারীরা ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে অমুসলিম পুরুষ পর্যটকদের লক্ষ্য করে। তারা নাম জিজ্ঞাসা করে এবং কালিমা পড়তে বলে।
  • নিহতরা: নিহতদের মধ্যে ছিলেন মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, কেরালা ইত্যাদি রাজ্যের পর্যটক, একজন ভারতীয় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট, একজন গোয়েন্দা ব্যুরোর কর্মকর্তা, এবং স্থানীয় ঘোড়াচালক সইদ আদিল হুসেন শাহ, যিনি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন।
  • দায় স্বীকার: দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF), লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা এবং জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের সাথে যুক্ত, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

তদন্ত ও প্রতিক্রিয়া

  • জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ তিনজন সন্দেহভাজন জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করেছে, যাদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক বলে ধারণা করা হয়। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) তদন্ত শুরু করেছে।
  • ভারত সরকার এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং ইন্দুস জল চুক্তি স্থগিত, ওয়াঘা-আট্টারি সীমান্ত বন্ধ, এবং পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে।
  • পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং চুক্তি স্থগিতকরণকে “যুদ্ধের কাজ” বলে অভিহিত করেছে।
  • স্থানীয় বাসিন্দা সজ্জাদ আহমদ একটি আহত শিশুকে বাঁচিয়ে বীরত্ব দেখিয়েছেন, যা ভাইরাল হয়েছে।

পহেলগাম হত্যাকান্ডের উপর ধ্রুব রাঠির ভিডিও টি দেখতে পারেন –

পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ

পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পেছনে বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা যায়, যা কাশ্মীরের জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে সম্পর্কিত:

  1. জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের বিরোধিতা: TRF দাবি করেছে যে এই হামলা কাশ্মীরে “বাইরের মানুষের” বসতি স্থাপন এবং “জনসংখ্যাগত পরিবর্তন” এর বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর কাশ্মীরে ভারতীয় নাগরিকদের জমি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়, যা কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
  2. পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ: ভারত সরকার দাবি করেছে যে হামলাটি পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী দ্বারা পরিকল্পিত, যারা কাশ্মীরে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীদের মধ্যে ৪-৫ জন পাকিস্তানি ছিল।
  3. পর্যটন শিল্পে আঘাত: পহেলগাম কাশ্মীরের পর্যটন অর্থনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ। এই হামলা পর্যটনকে লক্ষ্য করে অঞ্চলের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে হতে পারে।
  4. ধর্মীয় বিভাজন: হামলাকারীরা অমুসলিমদের লক্ষ্য করেছে, যা ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা হতে পারে। এক্স-এ কিছু পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে এটি “পাবলিক সেন্টিমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং” এর অংশ হতে পারে, যদিও এটি জল্পনা। তবে যতই ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টা করা হোক একথা অস্বীকার করা যাবে না যে প্রয়োজনের সময়ে মানুষ ধর্মীয় বিভেদ ভুলে একজন আরেক জনের পাশে দাড়িয়েছে।  যেমনঃ কাশ্মীরে শত শত পর্যটকের প্রা-ণ বাঁ,চা-নো দুই মুসলিম বোনের গল্পটি দেখতে পারেন-

পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ফলাফল

এই হামলার ফলাফল স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে:

  1. পর্যটন শিল্পে ধাক্কা: হামলার পর পহেলগামে পর্যটকদের আগমন কমে গেছে, এবং অনেকে ভ্রমণ বাতিল করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা, যাদের জীবিকা পর্যটনের উপর নির্ভরশীল, বলেছেন, “এই বছর আমাদের খাবারও জুটবে না।”
  2. ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা: হামলার পর ভারতের কঠোর পদক্ষেপ, যেমন ইন্দুস চুক্তি স্থগিত, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষের কারণ হয়েছে। এটি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
  3. নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা: হামলার সময় পহেলগামে পর্যাপ্ত সেনা উপস্থিতি না থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারত সরকার এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তবে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।
  4. স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া: কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ এই হামলার নিন্দা করেছে এবং রাস্তায় প্রতিবাদ করেছে। স্থানীয় বীর সইদ আদিল হুসেন শাহ এবং সজ্জাদ আহমদের সাহসিকতা জাতীয় শ্রদ্ধা অর্জন করেছে।
  5. আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: মলদ্বীপ, ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং ফ্রান্স এই হামলার নিন্দা করেছে এবং ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে।

পহেলগাম কাশ্মীরের একটি প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক রত্ন, যা তার অমরনাথ যাত্রা এবং মনোরম উপত্যকার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু ২০২৫ সালের হত্যাকাণ্ড এই শান্তির স্বর্গে একটি কালো অধ্যায় যুক্ত করেছে। এই হামলার কারণগুলো জটিল, যা কাশ্মীরের রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনার সাথে জড়িত। এর ফলাফল পর্যটন, নিরাপত্তা, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। আমাদের দায়িত্ব হলো সত্য জানা, ঐক্য বজায় রাখা, এবং কাশ্মীরের শান্তি পুনরুদ্ধারে অবদান রাখা।

আপনি কি মনে করেন পহেলগামের ভবিষ্যৎ কী হবে? আপনার মতামত জানান!

BIMSTEC

BIMSTEC (Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical and Economic Cooperation) হলো একটি আঞ্চলিক সংস্থা, যা বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান—এই সাতটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত। BIMSTEC-এর স্থায়ী সচিবালয় বাংলাদেশে (ঢাকা) অবস্থিত।

BIMSTEC

BIMSTEC

মূল লক্ষ্য:

অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্য, পর্যটন, পরিবহন, জ্বালানি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

 

কার্যক্রম:

সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

সংযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন (বন্দর, রেল, সড়ক যোগাযোগ)।

জ্বালানি ও প্রযুক্তি সহযোগিতা।

সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা।

 

চ্যালেঞ্জ:

সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পার্থক্য।

পর্যাপ্ত সংযোগ ব্যবস্থা না থাকা।

চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতি।

 

সাম্প্রতিক অগ্রগতি:

২০২২ সালে BIMSTEC-এর নতুন চার্টার স্বাক্ষরিত হয়।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (FTA) আলোচনা চলছে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস BIMSTEC-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

 

#BIMSTEC #DrYunus #Update

Economic Exceptionalism, Diversity equity inclusion (DEI), Critical Race theory (CRT) কি ? আমেরিকার পলেসি নির্ধারণে ধারণাগুলোর প্রভাব কি?

Economic Exceptionalism কি ? 

Economic Exceptionalism হলো কোন এমন একটি ধারণা যেখানে কোন একটি দেশ তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অন্য সবার চেয়ে অনন্য বা সেরা মনে করে। ধারণাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো সকল দিক থেকে সবার চেয়ে সেরা। বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার বৈধ অধিকার রয়েছে।

ইকনোমিক এক্সেপশনালিজম ধারণাটি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের পলিসি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ট্রাম্পের America First এর মাধ্যমে তিনি সব ক্ষেত্রে আমেরিকার সার্থকেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি মনে করেন যে আমেরিকার অর্থনীতি বিশ্বে সেরা এবং তাদেরই বেশি নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। ডাব্লিউটিও বা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো আমেরিকাকে তার যৌক্তিক হিস্যা থেকে বঞ্চিত করেছে বলে তিনি মনে করেন। ট্রাম্প মনে করেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি আমেরিকার অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক। অভিবাসন ব্যবস্থাকে তিনি অত্যন্ত কঠোরতার মধ্যে নিয়ে গিয়েছেন। সবকিছুই ইকোনমিক Economic Exceptionalism ধারণার সাথে সম্পর্কিত।

 

DEI কি ?

Diversity equity inclusion আন্তর্জাতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত।

Diversity এর মাধ্যমে সকল ধরনের মানুষের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়।

Equity এর মাধ্যমে সকল মানুষের ন্যায্যতা বিধান করা হয়।

Inclusion এটাই এমন একটি ধারনা সকল মানুষকে যেখানে সমান বিবেচনা করা হয় এবং সমানভাবে শ্রদ্ধা ও মূল্যায়ন করা হয়।

রিপাবলিকান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ধারণার বিরোধিতা করেন । তিনি মনে করেন এর মাধ্যমে Reverse Discrimination হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় যেখানে আমেরিকার শ্বেতাঙ্গরা বৈষম্যের শিকার হবে। এছাড়াও রক্ষণশীল এই নেতা মনে করেন এই ধারণার মাধ্যমে আমেরিকা LGBTQ প্রমোশন করা হবে। মূলত তার এই ধারণাটি বিরোধিতা করার পেছনে মূল কারণ হলো এর মাধ্যমে আমেরিকায় White Supremacy দুর্বল হয়।

Critical Race theory (CRT) কি?

ক্রিটিকাল এ রেস থিওরি DEI এর সাথে সম্পর্কিত একটি ধারণা।  এই থিউরি সমাজে বর্ণবাদ ও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। রিপাবলিকান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ধারণার বিরোধিতা করেন।