মধ্যপ্রাচ্য

ইরানকে “Neo-Colonial Resistant” বলা কেন? 

আধুনিক ভূ-রাজনৈতিক পরিভাষায় “Neo-Colonial Resistant” বলতে বোঝানো হয় এমন রাষ্ট্র বা শক্তিকে, যারা আধুনিক উপনিবেশবাদী প্রভাব, বিশেষত পশ্চিমা শক্তির সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এই প্রেক্ষাপটে ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে এমন একটি প্রতিরোধ শক্তি (resistance actor) হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।


🌍 ইরান বনাম Atlanticist Expansion

⚔️ Atlanticist Expansion কী?

  • এটি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের (NATO ও EU) ভূরাজনৈতিক সম্প্রসারণনীতি, যা এশিয়া, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরেশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে মনোনিবেশ করে।

  • এই সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য হলো সামরিক ঘাঁটি স্থাপন, পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা, জ্বালানি সম্পদ নিয়ন্ত্রণ ও ভূ-প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আধিপত্য বজায় রাখা।

 

🛡️ ইরান কীভাবে প্রতিরোধ করছে?

  • ইরান পশ্চিমা সামরিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছে ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর থেকেই।

  • সিরিয়া, লেবানন (হিজবুল্লাহ), ইয়েমেন (হুথি), ইরাক— এসব জায়গায় ইরান নিজস্ব বলয় ও প্রভাব তৈরি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনকে চ্যালেঞ্জ করে।


🔗 ইরান–রাশিয়া–চীন: একটি ইউরেশিয়ান ঐক্য

🇮🇷🤝🇷🇺 রাশিয়ার কৌশলগত মিত্র (Strategic Depth):

  • ইরান হচ্ছে রাশিয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে একটি আধিপত্য প্রতিরোধকারী লাইন অফ ডিফেন্স

  • সিরিয়া সংকটে রাশিয়া ও ইরান একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে।

🇮🇷🤝🇨🇳 চীনের জ্বালানি ও বেল্ট-রোড কোরিডর:

  • ইরান হলো চীনের তেলের বড় যোগানদাতা।

  • BRI (Belt and Road Initiative)-এর স্ট্র্যাটেজিক করিডর হিসেবেও ইরান গুরুত্বপূর্ণ।

  • ইরান পতনের অর্থ, চীনের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক কৌশলের ধস


🛢️ হরমুজ প্রণালী ও ইরানের জিও-পলিটিক্যাল হুমকি:

  • বিশ্বের প্রায় ২০% তেল এই প্রণালী দিয়ে যায়।

  • ইরান যদি এই পথ বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে তেল সংকট ও মার্কিন অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে

  • এই বাস্তবতা ইরানকে সামরিক আগ্রাসন থেকে একটি ডিটারেন্স শক্তি দেয়।


🌐 Eurasianism-এর বিস্তার:

🔄 Eurasianism মানে কী?

  • এটি একটি অ-পশ্চিমা জোটভিত্তিক ভাবধারা, যেখানে রাশিয়া, চীন, ইরান, তুরস্কসহ কিছু দেশ মিলে আটলান্টিক-বিরোধী জিওপলিটিকাল বলয় গড়ে তুলছে।

🧱 এই বলয়ের বৈশিষ্ট্য:

  • পশ্চিমা প্রভাব ও হস্তক্ষেপ থেকে স্বনির্ভরতা।

  • নিজস্ব নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও জ্বালানি নীতি গড়ে তোলা।

  • ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য পুনঃস্থাপন।

*************

ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের বিবর্তন


🕊️ বন্ধুত্বের সময়কাল (১৯৪৮–১৯৭৯)

সময়কাল ঘটনা
১৯৪৮ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
১৯৫০ ইরান দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৫০–৭০ দশক অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
১৯৫৭ ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা সাভাক গঠনে ইসরায়েলের মোসাদ সহায়তা করে।

🔥 শত্রুতার সূচনা (১৯৭৯–বর্তমান)

সময়কাল ঘটনা
১৯৭৯ ইরানে ইসলামি বিপ্লব → নতুন সরকার ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে অস্বীকার করে।
ইসরায়েল দূতাবাস → ফিলিস্তিনি দূতাবাসে রূপান্তরিত হয়।
১৯৮০-এর পর ইরান ফিলিস্তিনের পক্ষ নেয়, ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নেয়।
১৯৯০-এর দশক ইরান হেজবুল্লাহ, হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে সক্রিয় সহায়তা দেয়।
বর্তমান ইসরায়েল দাবি করে ইরান পরমাণু অস্ত্র অর্জনের পথে, এবং হামলার হুমকি দেয়।

🧨 বর্তমান দ্বন্দ্বের মূল কারণ

  • ইরান ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করে।

  • ইরান ফিলিস্তিনিদের সমর্থন ও অস্ত্র সহায়তা দেয়।

  • ইসরায়েল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে দেখে।

********************

Hazbara কি? 

Hazbara (הַסְבָּרָה‎) হিব্রু শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ “ব্যাখ্যা” বা “ব্যাখ্যা প্রদান”। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এটি বোঝায় ইসরায়েলের পক্ষে পরিচালিত জনসংযোগ, প্রচারণা ও কূটনৈতিক কার্যক্রম, যার লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের ভাবমূর্তি উন্নত করা এবং বিশ্বে নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলা করা।


🧩 Hazbara-র মূল উপাদানসমূহ:

  1. মিডিয়া সম্পর্ক (Media Relations):

    • সংবাদমাধ্যমে ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা।

    • সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহ, সফরের আয়োজন, ও কাঙ্ক্ষিত বার্তা প্রচার।

  2. জনকূটনীতি (Public Diplomacy):

    • সাংস্কৃতিক বিনিময়, বক্তৃতা, ও ছাত্রবৃত্তির মাধ্যমে বিদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ।

    • ইসরায়েলি সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন তুলে ধরা।

  3. লবিং (Lobbying):

    • বিদেশি সরকার ও সংসদ সদস্যদের প্রভাবিত করা।

    • বিভিন্ন দেশে প্রো-ইসরায়েল গ্রুপ ও লবিস্টদের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণে প্রভাব বিস্তার।

  4. কৌশলগত যোগাযোগ (Strategic Communications):

    • আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসরায়েলবিরোধী বার্তার জবাব দেওয়া।

    • সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় উপস্থিতি।


⚖️ বিতর্ক ও সমালোচনা:

❗ সমালোচকদের মত:

  • এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধামাচাপা দেওয়ার মাধ্যম হতে পারে।

  • ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বাস্তবতা আড়াল করে বিকৃত তথ্য ছড়ায়।

✔️ সমর্থকদের মত:

  • এটি নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক হাতিয়ার

  • ইসরায়েলের অবস্থান তুলে ধরার জন্য এটি জরুরি ও বৈধ কৌশল।


🧠 বিশেষ দিক:

Hazbara কোনো একক বা নির্দিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। বরং এটি একটি বিস্তৃত ও বহুস্তরবিশিষ্ট কার্যক্রম, যার মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, প্রবাসী ইহুদি সম্প্রদায়, শিক্ষাবিদ, ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরাও অংশ নেন।


🌍 আন্তর্জাতিক প্রভাব:

Hazbara বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলপন্থী মত গঠনে ভূমিকা রাখে এবং ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনের জবাব দিতে নানা কৌশল গ্রহণ করে। বিশেষত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মিডিয়া হাউজ, ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার Hazbara কৌশলের একটি মূল অংশ।

*****************************

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *